নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | NCTB BOOK

যে বিক্রিয়ার পরমাণুর নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে তাকে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া বলে। এটা স্বতঃস্ফূর্ত ভাঙন অথবা কৃত্রিম ভাঙন হতে পারে যাতে খুব শক্তিশালী কণা নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে যেমনটি পারমাণবিক চুল্লিতে ঘটে থাকে। যেমন—

A 1327l+H 24S 1430i+H il…(9.24)

সকল প্রকার নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াকে নিচের সাধারণ সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় :

X+a=Y+b

এক্ষেত্রে 'a' হচ্ছে আঘাতকারী কণা (42He) বা বুলেট; X হলো আঘাতপ্রাপ্ত লক্ষ্যবস্তু বা টার্গেট নিউক্লিয়াস; 'চ' হলো বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বহির্গামী কণা (H) এবং Y হলো পরিবর্তিত নিউক্লিয়াস ।

নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া X + a = Y+ b কে সংক্ষেপে লেখা হয় X( a, b ) Y

 সুতরাং সমীকরণ (9.24) হবে 2713Al (a, p) Si

এই বিক্রিয়াকে (o, p) বিক্রিয়া বলে। এখানে a হচ্ছে আঘাতকারী কণা আলফা বা ½ He এবং p হচ্ছে বহির্গামী কণা প্রোটন। 

 রাসায়নিক বিক্রিয়া ও নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার পার্থক্য :

    রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বিক্রিয়ক পদার্থের পরমাণুসমূহের বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রন সজ্জার পরিবর্তন ঘটে। 

   কোনো নতুন মৌলের উদ্ভব হয় না। কিন্তু নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় নিউক্লিয়ার আধানের পরিবর্তন হয়ে সম্পূর্ণ নতুন মৌলের উদ্ভব ঘটে। যেমন অ্যালুমিনিয়ামের মধ্যে আলফা কণা পরিচালনা করায় অ্যালুমিনিয়াম পরিবর্তিত হয়ে সিলিকনের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়েছে।

Content added || updated By
চিত্র :৯.৮

    শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলতে এমন স্ব-বহ বিক্রিয়া বোঝায় যা একবার শুরু হলে তাকে চালিয়ে রাখার জন্য কোনো অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন হয় না। কিশানযোগ্য বিক্রিয়ায় যে নিউট্রন মুক্তি লাভ করে তা শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে সম্ভব করে তোলে। আমরা যদি সমীকরণ (9.25)-এর কথা বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাব যে, কিশানের ফলে 23692U থেকে মুক্ত হয়েছে দুটি নিউট্রন । এখন এ দুটি নিউট্রন যদি আরো দুটি  23692U নিউক্লিয়াসের কিশান ঘটায় তাহলে পাওয়া যাবে 4টি নিউট্রন। এরা আরো এটি নিউক্লিয়াসের ফিশান ঘটিয়ে তৈরি করবে 8 (আট) টি নিউটন এবং এ প্রক্রিয়া ফিশানযোগ্য পদার্থ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। এ প্রক্রিয়াকেই বলা হয় শৃঙ্খল বিক্রিয়া । ৯.৮ চিত্রে শৃঙ্খল বিক্রিয়ার একটি নক্শা দেওয়া হলো।

   যে স্ব-ৰহ বিক্রিয়া একবার শুরু হলে তাকে চালিয়ে রাখার জন্য অতিরিক্ত কোনো শক্তির প্রয়োজন হয় না তাকে শৃঙ্খল বিক্রিয়া ৰলে।

 

    অনিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খল বিক্রিয়ায় অতি অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ শক্তির উদ্ভব হয়। একটি নিউট্রন দ্বারা শুরু করা একটি অনিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খল বিক্রিয়া নজিরবিহীন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। কিন্তু শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে যথোপযুক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তা থেকে পাওয়া যাবে অপরিসীম শক্তি। এই শক্তিকে মানব কল্যাণে ব্যবহার করা যেতে পারে। শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে নিউক্লিয়ার চুল্লিতে নানান রকম কাজ করা হয়। যেমন, ক্ষমতা বা শক্তি উৎপাদন, নিউট্রন উৎপাদন, তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ও কিশানযোগ্য পদার্থ উৎপাদন। এ ছাড়া পরমাণু বোমায়ও শৃঙ্খল বিক্রিয়ার প্রয়োগ রয়েছে।

Content added || updated By

নিউক্লিয়ার ফিউশন

     যে বিক্রিয়ায় দুটি হাল্কা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী একটি নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং অত্যধিক শক্তি বের হয় সে বিক্রিয়াকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিউশন। ফিউশন সংঘটিত হয় অত্যধিক উচ্চ তাপমাত্রায়। এ তাপমাত্রায় বিক্রিয়াতে অংশগ্রহণকারী পরমাণুগুলো সম্পূর্ণ আয়নিত অবস্থায় থাকে। এ অবস্থাকে বলা হয় প্লাজমা। নক্ষত্রে যে মৌলিক তাপোৎপাদী বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে এবং যা এ মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তির উৎস তা হলো হাইড্রোজেন পরমাণু ফিউশনিত হয়ে হিলিয়াম পরমাণু গঠন। এটা দুটি বিক্রিয়ায় ঘটে একটা প্রোটন-প্রোটন চক্র এবং অপরটি কার্বন-কার্বন চক্র। নিউক্লিয়ার ফিউশনকে নিম্নলিখিত সমীকরণ দ্বারা নির্দেশ করা যেতে পারে,

   H11+n01H12

     এখানে একটি প্রোটন একটি নিউট্রনকে গ্রাস করে তৈরি করছে একটি ডিউটেরন (H)। গ্রাসের সময় 3.9679 × 10-30 kg ভর হারিয়ে যাচ্ছে এবং 2.23 MeV শক্তি আবির্ভূত হচ্ছে। ডিউটেরনের গতিশক্তি এবং গামা রশি নিঃসরণের ফলে এ শক্তি পাওয়া যায়।

Content added || updated By

নিউক্লিয়ার ফিশান

১৯৩৯ সালে নিউক্লিয়ার ফিশান বিক্রিয়া সর্বপ্রথম শনাক্ত করেন বিজ্ঞানী অটোহান এবং এফ উসম্যান। 235U নিউক্লিয়াসের ওপর নিউট্রনের বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তারা লক্ষ করেন যে, ভারী নিউক্লিয়াস (যেমন 235U) আপতিত নিউট্রনটিকে শোষণ করে নেয়, ফলে লক্ষ্য (target) নিউক্লিয়াসটি (235U) দুটি ক্ষুদ্রতর কিন্তু প্রায় সমান ভর সংখ্যাবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হয়ে যায়। এই বিক্রিয়াকে বলা হয় কিশান বিক্রিয়া এবং ঘটনাটিকে বলা হয় ফিশান। এ নিউক্লিয়াস দুটিকে বলা হয় ফিশান ভগ্নাংশ (fission fragments)। নিউক্লীয় ফিশানের ফলে উৎপন্ন পদার্থগুলো সাধারণত অত্যধিক তেজস্ক্রিয় হয়। ফিশান ভগ্নাংশ হিসেবে বিভিন্ন নিউক্লিয় প্রজাতি (Nuclear species) আবির্ভূত হতে পারে। আমরা এখানে একটি আদর্শ নিউক্লিয় ফিশানের কথা উল্লেখ করব। 

      যে বিশেষ ধরনের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার একটি ভারী নিউক্লিয়াস প্রায় সমান ভর সংখ্যাবিশিষ্ট দুটি নিউক্লিয়াসে বিভক্ত বা বিভাজিত হয় তাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিশান।

  ধীর গতির (কম শক্তিসম্পন্ন) নিউট্রন দ্বারা ইউরেনিয়াম  23592U এর ফিশানকে নিম্নোক্ত সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা

U92235+n01U92236*X+Y + নিউট্রন + শক্তি

  এখানে [23592U]* হচ্ছে যৌগিক নিউক্লিয়াস যার স্থায়িত্বকাল মাত্র 10-12s। এটি ফিশান ভগ্নাংশ X এবং Y-এ ভেঙে যাওয়ার আগের অবস্থা নির্দেশ করে। নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় ভর-শক্তি এবং আধানের নিত্যতার শর্ত মেনে X এবং Y এর অনেকগুলো সমন্বয় হতে পারে। ইউরেনিয়ামের ফিশানে প্রায় 90 রকমের ভিন্ন ভিন্ন নিউক্লিয়াসের উৎপত্তি হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় কয়েকটি নিউট্রনও সৃষ্টি হয়। প্রতি ফিশানে গড়ে 2.47 নিউট্রন মুক্ত হয়। নিচে একটি নিউক্লিয় ফিশান বিক্রিয়া দেখানো হলো।

U92235+n01U92236*14054Xe+S3894r+2n01+ শক্তি

     এখানে দেখা যাচ্ছে  23592U নিউক্লিয়াস একটি নিউট্রন শোষণ করে  23692U যৌগিক নিউক্লিয়াসে পরিবর্তিত হয়। 92 পরে যৌগিক নিউক্লিয়াসটি দুটি নিউক্লিয়াস জেনন (Xe) এবং ট্রনসিয়াম (Sr)-এ বিভক্ত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় দুটি নিউট্রন সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রায় 200 MeV শক্তি মুক্ত হয়। 

     ফিশান ভগ্নাংশ 14054Xe এবং 9438Sr উভয়েই বিটা তেজস্ক্রিয়। ভারী নিউক্লিয়াসকে প্রোটন, ডিউটেরন, আলফা কণা এবং গামা রশ্মি দ্বারা আঘাত করলেও নিউক্লিয় ফিশান সংঘটিত হয়।

Content added || updated By
Promotion